ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০৩০ আয়োজন করতে বাংলাদেশের সমর্থন চায় দক্ষিণ কোরিয়া। প্রধান বন্দর নগরী বুশানে এই প্রদর্শনী আয়োজনে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

বিভিন্ন দেশের আন্তঃসরকারের সংস্থা ‘ব্যুরো ইন্টারন্যাশনাল দেস এক্সপোজিশনস’ (বিআইই) ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’ আয়োজন, দেখভাল এবং নিয়ম-কানুনের দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশ বিআইই সদস্য রাষ্ট্র। ফলে ২০৩০ সালে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড এক্সপো আয়োজক নির্বাচনে বাংলাদেশের ভোটের গুরুত্ব রয়েছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০৩০’ আয়োজনে সৌদি আরবের প্রতি প্রাথমিক সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের সমর্থন লাভ করতে খুবই তৎপর দক্ষিণ কোরিয়া।

ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের একজন কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশসহ কিছু বিআইই সদস্য রাষ্ট্র প্রথম রাউন্ডের ভোটে প্রতিদ্বন্ধী অন্য দেশকে সমর্থন দিলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়ার বুশান নগরীতে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০৩০ আয়োজনের পক্ষে ভোট দেবে বলে আশা করি’।

ওই কূটনীতিক আরও যোগ করেন যে, প্রতিযোগিতায় বুশানকে জয়ী করতে দক্ষিণ কোরিয়া সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সৌদি আরব রিয়াদে এবং ইতালি রোমে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানজনক এই প্রদর্শনী আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বুশানে আয়োজনের পক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করছে। তার মধ্যে আছে, বুশান ইনিশিয়েটিভ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমর্থন দেওয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ। বুশানের পক্ষে সরকারের প্রচার অভিযানের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সেলিব্রেটিসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ অংশ নিচ্ছেন। তার অন্যতম হলেন, সঙ্গীতশিল্পী সাই, যিনি ২০১২ সালে ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ গানের জন্যে গোটা বিশ্বে ঝড় তুলেছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বন্দর নগরী বুশান দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। আন্তর্জাতিক ইভেন্ট এবং উৎসব আয়োজনে শহরটি সুনাম অর্জন করেছে। বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন উপলক্ষ্যে নগরীটির দৃশ্য অপূর্ব সুন্দর। তার উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র সৈকতের কারণে এই শহর দেশি ও বিদেশি উভয় প্রকার পর্যটকদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তার বাইরেও বুশানের রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।

বুশানকে বিশ্বমানের ডিজিটাল আন্তর্জাতিক আর্থিক হাবে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালে ওয়ার্ল্ড এক্সপো আয়োজন করা তার অন্যতম। গাদেওকডো দ্বীপে একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে করে দেশি-বিদেশি আর্থিক উপযুক্ততা সৃষ্টি করা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়াকে গ্রীন স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। কার্বনমুক্ত পরিবেশের লক্ষ্যে প্রবৃদ্ধি সহায়ক হাইড্রোজেন শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়া বিআইই সদস্য দেশগুকে বলেছে যে, দক্ষিণ কোরিয়া ২০৩০ ওয়ার্ল্ড এক্সপো আয়োজনে বদ্ধপরিকর। দেশটি চতুর্থবারের মতো উপস্থাপনায় এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বুশানকে তুলে ধরার লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে বুশান ইনিশিয়েটিভ গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে, বুশানকে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর স্থান হিসেবে নির্ধারণের লক্ষ্যে গত ২০ জুন একটি উপস্থাপনা দিয়েছে দেশটি। ফ্রান্সে বিআইই’র ১৭২তম সাধারণ অধিবেশনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়োন সুক ইয়োল এই উপস্থাপনা দেন। সেখানে তিনি মানবজাতি যেসব অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে; তার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করে তা সমাধানের সুপারিশ উল্লেখ করেন।

এক্ষেত্রে বুশানে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০৩০ আয়োজন কীভাবে সহায়ক হতে পারে সে ব্যাপারেও জানিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক সাড়া বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।